Breaking News

header ads

সুবর্ণচরে এক নারী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা !

গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা
সুবর্ণচরের তাসলিমা আক্তার নামে এক নারী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। গত রোববার রাতে চর আমানুল্লাহ ইউনিয়নে ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে স্থানীয় চর জব্বার থানা পুলিশ তাসলিমার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে সোমবার লাশের ময়না তদন্ত শেষে তাসলিমার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ উদ্দিন।

জানা যায়, তাসলিমা আক্তার তার শিশু সন্তান তামিমকে সঙ্গে নিয়ে চর আমানউল্লা ইউনিয়নের চর বজলুল করিম গ্রামে মাওলানা রুহুল আমিন কামালের বাড়িতে কাজ নিয়েছিলেন ঈদের পর। এর আগে তিনি চরবাটা ইউনিয়নের নূর মাওলা মেম্বারের বাড়িতে কাজ করতেন। সেখান থেকে কাজ ছেড়ে দেওয়ার পর চরবাটা খাসের বাজারের ব্যবসায়ী কামালের মাধ্যমে রুহুল আমিন কামালের ছেলে হুমায়ূন তাদের বাড়িতে তাসলিমাকে গৃহপরিচারিকার কাজ দেন।

মাওলানা রুহুল আমিন কামাল তাঁর কর্মস্থল লক্ষ্মীপুরে থাকেন, সপ্তাহে একদিন শুক্রবার তিনি বাড়িতে এসে পারিবারিক ও সামাজিক কাজকর্ম শেষে শনিবার কর্মস্থলে ফিরে যান। বাড়িতে নিয়মিতভাবে তাঁর স্ত্রী, মেঝ ছেলে হুমায়ূন এবং তার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়মিত বসবাস করেন।

সূত্র মতে, কাজ নেওয়ার পর ১৮ জুন, বুধবার তাসলিমা তার এক আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য ছুটি নেয়। সেখান থেকে ফিরে আসে ১৯ জুন, বৃহস্পতিবার। একই দিন দুপুরের খাবার পর তাসলিমা হুমায়ূনের আম্মাকে জানায়, তিনি আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। তাই আর কাজ করবেন না। যেহেতু সে আবার বিয়ে করবেন, এ জন্য তাকে কাজে রাখার জন্য চাপাচাপি করেননি তারা।

স্থানীয় সূত্রমতে, শনিবার তাসলিমা আবার ফিরে আসে। ফেরত আসার পর তাকে ফের কাজে নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। পরিবারের সদস্যরা তাকে কাজে নেন। শনিবার যখন ফেরত আসে তাসলিমা, সে সময় তাকে বেশ ক্লান্ত দেখায়। এ জন্য খাবার খেয়ে বাচ্চাসহ বিশ্রামের জন্য বলেন হুমায়ূনের আম্মা। রোববার সকালে তাসলিমা হুমায়ুনের স্ত্রী এবং আম্মাকে জানায়, যে ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তার কাছে সে আর ফিরবে না। কারণ সে এ দু’দিনে তাকে ব্যাপক মারধর এবং যৌন নির্যাতন করে এবং কোন একটা ওষুধ খাইয়েছে। এতে করে তার প্রচণ্ড ঘুম পায় এবং শরীর দুর্বল লাগছে। হুমায়ূনের আম্মা তাসলিমাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য ডাক্তার ডাকতে চাইলে তাসলিমা জানায় ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে। রোববার সন্ধ্যার দিকে হুমায়ূনের আম্মা পাশের বাড়িতে (তাহের মেম্বারের বাড়ি) বেড়াতে যান। হুমায়ূন চরবাটা খাসের হাট বাজারে গিয়েছিল। হুমায়ূনের স্ত্রী ও ১ ছেলে ১ মেয়ে বাড়িতে ছিল। তাসলিমা ও তার ছেলে তামিমও বাড়িতে ছিল। এক ফাঁকে তাসলিমা হুমায়ূনের স্ত্রীকে বলেন, তার ঘুম পাচ্ছে, তিনি বিশ্রাম নেবেন। রাত সাড়ে ১০টা বা তার আগে পরে তিনি হঠাৎ তাসলিমার বাচ্চার কান্নায় ঘুম থেকে উঠে ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন, কান্না করছ কেন? জবাবে ছেলে জানায়, তার পানির তৃষ্ণা পেয়েছে, তাকে যেনে পানি দেওয়া হয়। হুমায়ুনের স্ত্রী তাকে বলেন, তোমার মাকে বল পানি দিতে। ছেলেটি বলে, মা কথা বলে না। হুমায়ুনের স্ত্রী তখন রুমের প্রধান দরজা অনেকক্ষণ ধাক্কাধাক্কি করে সাড়া না পেয়ে পাশের বারান্দা থেকে জানালার ফাঁক দিয়ে ভেতরে দেখার চেষ্টা করে। অন্ধকার থাকায় কিছু দেখা যাচ্ছিলো না। পরে আলো এনে দেখে মেয়েটি ঝুলছে। তখন হুমায়ুনের স্ত্রী ভিত সন্ত্রস্ত হয়ে তার শাশুড়িকে ফোন করে বলেন, তাসলিমা দরজা বন্ধ করে রাখছে। কোন আওয়াজ করছে না। হুমায়ূনের আম্মা সঙ্গে সঙ্গে তাহের মেম্বারদের বাড়ি থেকে বাড়িতে ছুটে আসেন। তার সঙ্গে তাহের মেম্বারের ছেলে মাইনউদ্দিন, মাইন উদ্দিনের চাচাতো ভাই জাফর, হাসান- অনেকেই ঘটনাস্থলে আসেন এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেনকে অবহিত করে তার মাধ্যমে থানাকে জানানো হয়। ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা ভোর চারটার দিকে তাসলিমার লাশ থানায় নিয়ে যান। 

দুপুরে তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যার দিকে পুলিশ তার লাশ আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করে। 

চর জব্বার থানা পুলিশ জানিয়েছেন রিপোর্টের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের চর বাগ্গায় তাসলিমা আক্তারের বাড়ি ।

Post a Comment

0 Comments