ইউনুছ শিকদার (রামগতি থেকে ঘুরে): করোনা মহামারির দুর্যোগের সময়েও তিনি আসেন নি নির্বাচনী এলাকায়। এবার রামগতি- কমলনগরের বানভাসি মানুষের এই করুন অবস্থায়ও পাশে নেই লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের এমপি মেজর (অবঃ) মান্নান।
লক্ষ্মীপুর-৪ রামগতি- কমলনগর আসনের সংসদ সদস্য ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অবঃ)আব্দুল মান্নানের অনুপস্থিতি ও দলিয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ না থাকা নিয়ে মিস্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রায় একবছর ধরে তাকে নির্বাচনী এলাকায় না পেয়ে দলিয় নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক হতাশা লক্ষ্য করা গেছে। নেতাকর্মীদের দাবী একজন এমপি ঐ এলাকার সবার অভিভাবক। করোনা ভাইরাসের মত মহামারিতে এ এমপিকে না পেয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
নির্বাচিত হওয়ার পর তিন চার মাস পর পর দুই উপজেলার কর্মকর্তাদের নিয়ে মাসিক সমন্বয় সভায় অংশ গ্রহন করলেও দলীয় কোন কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করেনি ।
এমপি হওয়ার পর এলাকায় তাঁকে দেখেছে এমন লোক খুবই কম। অসুস্হ্য নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর না নেওয়া, বিয়ে-সাদী ও আচার অনুষ্ঠানে না যাওয়া, দলিয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় ও তাদের খোঁজ-খবর না নেওয়া, নানা কাজে এমপির ডিও লেটার না দেওয়া ও ঢাকায় গিয়েও তার সাথে সাক্ষাত না পাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন তারা।
সাংসদের আগমন না থাকায় আওয়ামীলীগ,যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নানা সমালোচনা করে বেড়ান। মেজর মান্নান এমপি হওয়ার পর রামগতিতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল ওয়াহিদ ও কমলনগরে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুল আমিন মাষ্টার কে তার প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্ত এ দুই নেতাকে জনবিচ্ছিন্ন ও জনসমর্থনহীন নেতা বলে দাবী করেন তৃনমূল আওয়ামীলীগের নেতা- কর্মীরা। তাদের দাবি আব্দুল ওয়াহিদ ও নুরুল আমিন মাষ্টার এমপির প্রতিনিধি হয়ে তারা তাদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। নেতাকর্মীদের কোন খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না তারা।
বিকল্পধারার সূত্রে জানা গেছে, মেজর মান্নান দেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাবেক মন্রী। খুবই ব্যস্ত মানুষ। এলাকায় না আসলেও তিনি সবসময় এলাকার খোঁজখবর রাখেন। এ আসনে ২০১৮ সালের ৩০ সে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অবঃ) আব্দুল মান্নান নৌকার টিকেট নিয়ে এমপি হন।
তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলিয় জোট থেকে জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। তানি ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে পরাজিত হন।
মুলত আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। পরে দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে মেজর আব্দুল মান্নান নৌকা প্রতিক নিয়ে এমপি হন।
রামগতির চরপোড়াগাছা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম বলেন বর্তমান এমপি প্রায় এক বছর ধরে এলাকায় আসেনা। করোনা ভাইরাস, নদী ভাঙ্গন ও জোয়ারের পানিতে গোটা রামগতি- কমলনগর ডুবে গেলো,কিন্তু তার কোন খবর নেই। ফেসবুকে সাধারন মানুষ তার পদত্যাগের দাবীসহ নানা সমালোচনা করে যাচ্ছে।
চরকাদিরা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহেল বাংগালী বলেন, এমপিকে আমরা দেখিনা। রামগতি-কমলনগরের নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাকে আমরা কাছে পাইনা। তিনি রামগতি- কমলনগরে এলেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সাথে কোন বৈঠক ও যোগাযোগ করেনা।
শুনলাম এক নেতাকে প্রতিনিধি করেছে, তার কারণে আমাদের নেতা-কর্মীরা সাংসদের কাছে ভিড়তে পারেনা এমন অভিযোগ করেন সাহেবের হাট ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান,মনির হোসেন ও হাজিরহাটের জসিম উদ্দীন।
উপজেলার চরফলকন, চরকালকিনি, সাহেবেরহাট, পাটোয়ারী হাট ও হাজিরহাট ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা বলেন, মেজর মান্নানকে কখনো এলাকায় দেখা যায়না, রামগতি- কমলনগরে মেঘনার ভাংগনে উপকুলের মানুষগুলো দিশেহারা। আবার জোয়ারের পানিতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে, অথচ এমপি সাহেব রাজধানীতে এসি রুমে বসে আছেন। এমন প্রতিক্রিয়া শুধু ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদেরই নয়, সাধারণ মানুষদেরও।
জানতে চাইলে সংসদ সদস্য মেজর আব্দুল মান্নানের মুঠোফোনে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এই সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মেজর মান্নানের প্রতিনিধি আব্দুল ওয়াহিদ ও নুরুল আমিন মাষ্টারের মুঠোফোন একাধিকবার চেষ্টা করে তাদেরকে ও পাওয়া যায়নি।


0 Comments