Breaking News

header ads

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে অসামাজিকতা !

গাংচিল অনলাইন.কম: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সব বয়সের মানুষ ব্যবহার করিয়া থাকেন। পিতা, পুত্র, কন্যা, ছোট ভাই, বড় ভাই, পাড়ার মুরুব্বি, ছাত্র, শিক্ষক, ইমাম, মুসুল্লি সবাই এখন ফেসবুকে। নির্বোধেরা অসামজিক ছবি ও ভিডিও দিয়া এই মাধ্যমটিকে নোংরা করিতেছে। পরিবার নিয়া যেমনি বাংলা সিনেমা দেখা যায় না, তেমনি পরিবার নিয়া ফেইসবুক ব্যবহার করাও যায় না।

অসামজিক কাজ করা যেমনি অপরাধ তেমনি অসামজিক কাজের ভিডিও দেখাও অপরাধ। কুরুচিপূর্ণ কিছু মানুষ সেইগুলো দেখছে এবং ছড়িয়ে দিয়ে সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করিতেছে।

বড়ই পরিতাপের বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যে আমাদের ক্রমশ অসামাজিক বানাইতেছে, ইহা নূতন কথা নহে। ফেসবুক, টুইটার জাতীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অনেকে তুলনা করেন কোকেনের সঙ্গে। কোকেন গ্রহণ করিলে মস্তিষ্কে যে প্রভাব পড়ে, ফেসবুকের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটে। প্রাপ্তবয়স্করা না হয় তাহাদের বোধবুদ্ধি দিয়া অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ করিতে পারেন ফেসবুকের আসক্তি। 

ফেসবুকের যেইসকল ইতিবাচক দিক রহিয়াছে, তাহাকেও অনেকে আসক্তির পর্যায়ে না লইয়া যথাযথভাবে ব্যবহার করিতে পারেন। কিন্তু স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিজেদের অপরিপক্বতার কারণে ফেসবুকের প্রতি ভয়াবহ আসক্তিতে পড়ে। 

সম্প্রতি ‘সোশ্যাল মিডিয়া পার্টিসিপেশন অব দ্য সেকেন্ডারি স্কুলস ইন ঢাকা সিটি’ শীর্ষক নায়েমের একটি জরিপ প্রতিবেদন হইতে জানা গিয়াছে, ঢাকায় স্কুল চলাকালেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত রহিয়াছে প্রায় ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। ইহার মধ্যে ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ইহাকে আবার ব্যবহার করিতেছে পাঠদান চলাকালেই। 

শিখন-শেখানো কার্যক্রম ব্যাহত হইবার কারণে ২০১৭ সালে শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করিয়াছে সরকার। তবে এই নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে ব্যর্থ হইতেছে অনেক বিদ্যালয়।

কেবল বাংলাদেশে নহে, শিশু-কিশোরদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের কুফল লইয়া উদ্বেগ বাড়িতেছে বিশ্বব্যাপী। ফ্রান্স সরকার কয়েক মাস পূর্বে সেই দেশের বিদ্যালয়ে স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধে আইন পাস করিয়াছে। মনোবিদরা মনে করেন যে, ফেসবুকের আসক্তির কারণ হইল নার্সিসিজিম। 

ফেসবুকের মতো নিজেকে লইয়া মাতিয়া থাকা এবং অন্যদের মাতাইয়া রাখিবার দারুণ মাধ্যম আর দ্বিতীয়টি নাই বলিয়াই মানুষ ফেসবুকে এত আসক্ত হইয়া পড়ে। 

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক কয়েক বত্সর পূর্বে একটি গবেষণায় দেখিয়াছিলেন যে, নিজেকে লইয়া কথা বলিতে, নিজের মতামত ব্যক্ত করিতে মানুষ এতটাই ভালোবাসে যে তাহা করিতে গিয়া যদি কিছু আর্থিক ক্ষতিও হয়, তাহাতেও তাহার আপত্তি থাকে না। কোকেন বা সেই রকম কোনো নেশার জিনিসে মস্তিষ্কের যেই অংশ জাগিয়া ওঠে নিজের সম্বন্ধে কথা বলিতে গিয়াও মস্তিষ্কের সেই অংশই সক্রিয় হয়। ইহার ফলে আসক্ত ব্যক্তির আবেগ-অনুভূতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কাজের সময় ঠিকঠাক থাকে না, কাজের আগ্রহ হারাইয়া যায়। সময় জ্ঞান লোপ পায়, এমনকী অনেক অসৎ পথেও পরিচালিত হইতে বাধ্য হইতে পারে। নিজেকে অন্যের সহিত তুলনা করিয়া ঈর্ষাবোধ করিতে শুরু করে। ইহা ছাড়াও বিবিধ শারীরিক সমস্যাও দেখা দেয় মাত্রাতিরিক্ত ফেসবুক আসক্তিতে। পিঠব্যথা, মাথাব্যথা, স্পন্ডাইলিটিজ বা মেরুদণ্ডে সমস্যা ছাড়াও ওজনের ভারসাম্য নষ্ট হইয়া অনেকের ওজন বাড়িয়া বা কমিয়া যায়। ইনসমনিয়া বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, দেখা দিতে পারে চোখের সমস্যা।

আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তির দায় অভিভাবকরা এড়াইতে পারেন না। কারণ শিক্ষার্থীরা যে ডিভাইসটির মাধ্যমে এই জগতের সহিত জড়াইয়া পড়িতেছে, তাহা সাধারণত সরবরাহ করা হয় পরিবার হইতেই। বাবা-মাকে বুঝিতে হইবে ইহার সুদূরপ্রসারী ক্ষতির দিকগুলি।

Post a Comment

0 Comments