গাংচিল অনলাইন ডেস্ক: ভারত সফরের টেস্ট দলে জায়গা পাওয়ার আগে জাতীয় লিগে ইমরুল কায়েসের তিনটি ইনিংস—২০২*, ৯৩ ও ২২। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সাদমান ইসলামের ব্যাট থেকে এল ১৭৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। মাহমুদউল্লাহ প্রস্তুতি সারলেন ৬৩, ৬৩ ও ১১১ রানের তিনটি দ্যুতিময় ইনিংস খেলে। এবাদত হোসেন ভারতে রওনা দেওয়ার আগে যে ম্যাচটি খেলেছিলেন, পেয়েছিলেন ৮ উইকেট।
এবার ভারত সফরের প্রস্তুতি সারতে জাতীয় দলের প্রায় সব খেলোয়াড়ই খেলেছিলেন ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। জাতীয় লিগে যে দুই-তিনটি রাউন্ড তাঁরা খেলেছিলেন, বেশির ভাগই ধারাবাহিক রান পেয়েছেন, উইকেট পেয়েছেন। জাতীয় লিগের পারফরম্যান্স বিবেচনায় সাদা পোশাক-লাল বলে প্রস্তুতি খুবই ভালো হয়েছিল বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ইন্দোর ও কলকাতা টেস্টে তাঁদের পারফরম্যান্স দেখে মনে হয়েছে, বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে রীতিমতো নবিশ তারা। জাতীয় লিগে এত এত রান আর উইকেট নেওয়ার সেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে গেল কোথায়?
ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মেলানো যায় না। দুটির পার্থক্য থাকবেই। সেই পার্থক্য কতটা? ইংল্যান্ডের কাউন্টি, অস্ট্রেলিয়ার শেফিল্ড শিল্ড কিংবা ভারতের রঞ্জি ট্রফির মানের সঙ্গে পার্থক্য ১৫-২০ কিংবা ১৮-২০ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে? কলকাতা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ পেসার আল আমিন বলেছিলেন, ‘আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মানে আকাশ-পাতাল পার্থক্য!’
এই আকাশ-পাতালের পার্থক্য পুরোপুরি ঘোচানো কঠিন। কিন্তু বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যে বিস্তর পার্থক্য, সেটি নিশ্চয়ই অনেকটা কমিয়ে আনা যায়। বিসিবি তা আনবে কী করে? উত্তরটা বিসিবির কর্তাদের অজানা নয়। এবার ভারত সফরেই তো উত্তরটা তাঁদের পেয়ে যাওয়ার কথা। মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট সংস্থার কথাই বলা যাক, মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরেই বাংলাদেশ সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলেছে। মধ্যপ্রদেশ হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটে পিছিয়ে পড়া এক প্রদেশ। সেই প্রদেশে যে ক্রিকেট অবকাঠামো আছে পুরো বাংলাদেশেই তা আছে কিনা সন্দেহ!
যে রাজকোটে বাংলাদেশ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলেছে, শহরটি গুজরাট রাজ্যের চতুর্থ বৃহত্তম শহর। একটি প্রদেশের চতুর্থ বৃহত্তম শহরেই উন্নত ক্রিকেট অবকাঠামো! শুধু অবকাঠামো নির্মাণেই শেষ নয়, আন্তর্জাতিক ম্যাচ না থাকলেও বছরের ৭৫ শতাংশ সময় ব্যস্ত থাকে মাঠ। এক রাজ্য ক্রিকেট সংস্থারই যে কত কর্মসূচি। রাজকোটের অসাধারণ এক স্টেডিয়াম থাকার পরও এ প্রদেশের বৃহত্তম শহর আহমেদাবাদে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থা। এক সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার অবকাঠামোর সঙ্গেই তো বিসিবির পেরে ওঠা কঠিন। সেখানে পুরো ভারতের কথা একবার চিন্তা করুন!
মুগ্ধ করা সব স্টেডিয়াম নির্মাণ করেই ভারত থেমে থাকেনি। কলকাতা টেস্ট শুরুর আগের দিন ইডেন গার্ডেন্সে কথা হচ্ছিল ভারতীয় ক্রিকেটে বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রধান কিউরেটর আশিস ভৌমিকের সঙ্গে। আশিসের বাড়ি ত্রিপুরায়। গত এক দশকে ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেট কীভাবে আমূল বদলে গেছে, সেটি একটি উদাহরণ দিয়ে তুলে ধরলেন বিসিসিআইয়ের এ বাঙালি কিউরেটর। রঞ্জি ট্রফিতে ভারতের সব কিউরেটরকে নির্দেশ দেওয়া হয়, বিদেশে খেলতে গেলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যে ধরনের উইকেটে সমস্যায় পড়েন ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেট হতে হবে ঠিক তেমন। কোনো উইকেট হবে স্পোর্টিং, কোনো উইকেট হবে ঘাসের। কোনো উইকেট হবে গতিময়-বাউন্সি। আশিস বললেন, ‘খেলোয়াড় তৈরির কারখানা হচ্ছে ঘরোয়া ক্রিকেট। ভালো খেলোয়াড় পেতে এ কারখানা হতে হবে খুব উন্নত। এখানে আমরা কোনো ছাড় দিই না।’
এখানেই শেষ নয়, অদল-বদল করে দেওয়া হয় আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার প্রধান কিউরেটরদের। যেমন—ইডেনের প্রধান কিউরেটরকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে অন্য রাজ্যে। আরেক রাজ্যের প্রধান কিউরেটর আসবেন ইডেনের উইকেট বানাতে। বিসিসিআইয়ের কড়া নির্দেশ, ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেট হতে হবে খুবই ভালো। আম্পায়ারিংয়ের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে কি এমনটা দেখা যায়? দেখা যায় না বলেই পার্থক্যটা আকাশ আর পাতালের। এ পার্থক্য কমাতেই হবে বিসিবিকে। না হলে টেস্টে বারবার অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হবে। আর বলে যেতে হবে—‘আমরা শিখছি!'


0 Comments