ইউনুছ শিকদাঃ আদর্শ বাবা সম্পর্কে এক সন্তানের মন্তব্য, "আমরাও এমন আদর্শ পিতা হতে চাই"। বাবার স্মৃতিচারণ করে ছেলের কথাগুলো পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-
আমার আব্বাজানকে (রহঃ) আল্লাহ পাক জান্নাতুল ফেরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন। আমাদেরকে সবরে জামিল ধরার তাওফিক দান করুন। আমার আব্বাজান কোরআনের একনিষ্ঠ খাদিম ছিলেন, অত্যন্ত ভালো হাফেজ এবং আলেম ছিলেন। উঠতে -বসতে সব সময় কোরআন শরিফ পড়তেন।
আমার আব্বাজানের জন্ম হয় চট্টগ্রামের সন্দীপ থানায় ষাটের দশকের শেষের দিকে। এরপরে ওই বাড়িটা নদীতে বিলিন হয়ে যাওয়ার পরে আমার বাপ-দাদারা চট্টগ্রামের রাংগুনিয়ার খন্ডলিয়া পাড়াই (আল্লামা আজিজুল হক আল মাদানি সাহেব এবং পটিয়ার সাবেক শাইখুল হাদিস আল্লামা আইয়ুব সাহেব রহঃ এর এলাকা) অল্পকিছু জাইগাতে বাড়ি করেন। অত্যন্ত নাজুক হালত ছিল তখন আমার বাপ-দাদাদের। আমার দাদু কান্নাকাটি করতেছে আমার ছেলেদের এখন কি হবে, এই সেই ভেবে। পাশেই খন্ডলিয়া পাড়া মাদ্রাসা, আজিজুল হক আল মাদানি সাহেব সেই মাদ্রাসাই তখন হিফজ খানাই পড়তেন তাঁর আম্মাজান তাঁকে নিয়ে আমার আব্বাজানদের বাড়িতে এসে আমার আব্বাকে মাদ্রাসাই নিয়ে যান। এখান থেকেই আমার আব্বার পড়া-লিখা শুরু।
সন্দীপ ভেংগে যাওয়ার পরে অধিকাংশ আত্মীয় স্বজন সন্দীপ থেকে নোয়াখালী কাছে হওয়াতে নোয়াখালী গিয়ে বাড়ি করেন,আমার দাদারাও এখানে জাইগা সংকির্ণ হওয়াতে কয়েক বছর পরে নোয়াখালী চলে যান। আমার আব্বাজান চট্টগ্রামেই ছিলেন। হিফজ শেষ করে কিতাব বিভাগ পাঞ্জুম পর্যন্ত ছিল এই মাদ্রাসাই ওটাও শেষ করেছেন। এরপরে আমার আব্বাজান ঐতিহ্যবাহী দীনি শিক্ষা নিকেতন আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ায় পাড়ি জমান। ওখান থেকে ১৯৯১ ইং সনে দাওরায়ে হাদিস শেষ করেন। এরপরে যেখান থেকে আমার আব্বার শিক্ষা জীবনের সূচনা খন্ডলিয়া পাড়া মাদ্রাসা সেখানেই কর্ম জীবনের সূচনা করেন।
এরপরে পরিবারের অভাব অনটন থাকায় বাবা সৌদিআরবে পাড়ি জমান, সেখানে থানা মসজিদের ইমাম সহ দোকান ইত্যাদি ছিল। এরই মাঝে ১৯৯৭ ইং সনে আমাদের বাড়ির পাশে মুরুব্বিদের পরামর্শে সকলের সহযোগিতায় একটা কাওমি মাদ্রাসা প্রথিষ্ঠা করেন, মাদ্রাসার নামকরণ করেন ইমামে আ'জম আবু হানিফা নো'মান ইবনে সাবিত র. এর নামে। বর্তমানে মাদ্রাসাটা নুরানি হিফজ সহ জামাতে চাহারুম পর্যন্ত ক্লাস চলিত।
দীর্ঘ ২০/২১ বছর সৌদিআরবে ছিলেন, সবসময় কোরআন শরিফ আর দীনি ফিকিরে থাকতেন। আব্বা কয়েক বছর যাবত ডাইবেটিজ রোগে আক্রান্ত ছিলেন, ২০১২ সালে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ইনডিয়া যাওরার জন্য ইন্ডিয়ান এম্বাসিতে যাওয়ার সময়ে ঢাকাই ভিসা হারাই ফেলেন, এরপরে অনেক চেষ্টা করেও আর সৌদিতে আসা হইনি। এরপর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাদ্রাসা মসজিদ আর বাড়িতেই সময় কাটছে। গত কয়েকদিন গায়ে জর ছিল, কমতো বাড়তো এমন। সর্বশেষ গত শনিবার শরীর খারাপ দেখা দিলে মাইজদি নিয়ে যাওয়া হই, মাইজদির ডাক্তাররা ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়, ঢাকার কাছাকাছি যাওয়ার পরে আমার আব্বাজান কোরআনের প্রেমিক কোরআন পড়তে পড়তেই ঘুমাই যান, সবাই মনে করছে বাবাজান ঘুমাচ্ছেন, কেউ ধারনাও করেনি যে আমার বাবাজান আল্লাহর জিম্মাই চলে গেছেন, বাবাজানের রুহ মোবারক এই দুনিয়াতে আর নাই। হাসপাতালে নেওয়ার পরে ডাক্তাররা বলতেছে উনি রব্বে আ'লার জিম্মাই, এটাই আমার বাবার শেষ ঘুম ছিল, বাবা আর কখনো আমাকে আব্বু বলে ঢাকবেননা।
মৃত্যুকালে আমার বাবার বয়স ছিল ৫৪/৫৫, বাবা আমরা দুইভাই চারবোন আম্মাজান সহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে চিরদিনের জন্য ঘুমাই গেছেন। বাবা আপনার সাথে আমাদের জান্নাতেই মোলাকাত হবে ইনশাআল্লাহ।


0 Comments